.jpg)
দ্বীনদার ব্যক্তির রূহ
রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন, যখন রূহ তাহার শরীর হইতে কবজ করা হয় তখন সে তাহার শরীরকে বলে, আল্লাহ তোমাকে উত্তম পুরস্কার দান করুন। তুমি আমাকে লইয়া আল্লাহর ইবাদত পালনে ব্যস্ত হইতে এবং আল্লাহর নাফরমানী করিতে আমাকে লইয়া বিলম্ব করিতে। তুমিও মুক্তিলাভ করিয়াছ এবং আমাকেও মুক্তিদান করিয়াছ। তখন শরীরও তাহার রূহকে অনুরূপ কথা বলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, তখন যে যমীনে সে ইবাদত করিত সেই যমীন এবং আসমানের যেই দরজা দিয়া তাহার আমল উপরে উঠান হইত এবং যে দরজা দিয়া তাহার রিযিক অবতীর্ণ হইত তাহারা চল্লিশ দিন যাবৎ কাঁদিতে থাকে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, মওতের ফিরিস্তা যখন তাহার রূহ কবজ করেন তখন পাঁচশত ফিরিস্তা। তাহার শরীরের নিকট দন্ডায়মান হয় এবং তাহাকে গোসল দেওয়ার সময় মানুষে তাহার শরীর পাল্টাইবার পূর্বেই তাহারা তাহার শরীর পাল্টাইয়া দেয়। এবং তাহাকে গোসলদানে শরীক হয়। মানুষের কাফন পরিধান করাইবার পূর্বেই তাহারা তাহাকে কাফন পরিধান করায়। মানুষের সুগন্ধি লাগাইবার পূর্বে তাহারা তাহাকে সুগন্ধি লাগায়। এবং তাহার বাড়ীর দরজা হইতে কবর পর্যন্ত দুই সারিতে সারিবদ্ধ হইয়া তাহার জন্য মাগফিরাতের দু'আ করিতে করিতে তাহার প্রতি অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করে। ঠিক সেই মুহূর্তে ইবলীস এত জোরে চিৎকার করে যেন তাহার হাডিড ভাংগিয়া যায়। তখন সে তাহার লশকরকে বলে, আরে এই ব্যক্তি কিভাবে তোমাদের আক্রমণ হইতে রক্ষা পাইল? তখন তাহারা বলে, এইব্যক্তি নিষ্পাপ ছিল।
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, মৃত্যুর ফিরিস্তা যখন তাহার রূহ লইয়া আসমানে আরোহণ করেন, তখন জিবরীল (আ) সত্তর হাজার ফিরিস্তাসহ তাহাকে অভ্যর্থনা করেন এবং তাহারা প্রত্যেকেই আল্লাহর পক্ষ হইতে তাহাকে ভিন্ন ভিন্ন সুসংবাদ দান করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন মৃত্যুর ফিরিস্তা তাহার রূহ লইয়া যখন আরশের নিকট পৌঁছায় তখন সে সিজদায় অবনত নয়। তখন আল্লাহ তা'আলা মৃত্যুর ফিরিস্তাকে বলেন, আমার বান্দার রূহ লইয়া তুমি কাটাবিহিন বরই সাজান কলা প্রশস্ত ছায়া ও প্রবাহিত পানির মধ্যে রাখিয়া দাও। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন, "অতঃপর যখন তাহাকে দাফন করা হয়, তখন তাহার নিকট তাহার সালাত আসিয়া তাহার ডানদিকে উপস্থিত হয় তাহার সাওম আসিয়া তাহার বাম দিকে, কুরআন আসিয়া তাহার মাথার নিকট সালাতের জন্য তাহার পদ চালনা তাহার পায়ের নিকট দাঁড়ায়। তাহার ধৈর্যধারণ কবরের এক পার্শে দন্ডায়মান হয়। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা তাহার নিকট কিছু আযাব প্রেরণ করেন অতঃপর উহা যখন তাহার ডানদিকে আসে তখন তাহার সালাত উহাকে বাধা দিয়া বলেন, এই ব্যক্তি সদা তাহার জীবনকে সৎ কাজে ব্যস্ত রাখিয়াছে এখন সে একটু আরাম করিতেছে। অতঃপর বামদিক হইতে আযাব আসিবে তখন তাহার সাওমও অনুরূপ বলিবে। তাহার মাথার দিক হইতে আসিলে কুরআন ও যিকিরও অনুরূপ কথা বলিয়া উহাকে বিদায় দিবে। তাহার পায়ের নিকট দিয়ে আসিলে সালাতের জন্য তাহার পদচালনা উহাকে অনুরূপ বলিয়া বিদায় দিবে। মোটকথা যেই দিক হইতেই উহা তাহার নিকট পৌঁছাবার চেষ্টা করিবে সেই দিক হইতেই বাধা প্রাপ্ত হইবে। অতঃপর আযাব যখন ফিরিয়া চলিয়া যাইতে থাকিবে তখন, তাহার ধৈর্য অন্যান্য আমল সমূহকে বলিবে, আমি দেখিতেছিলাম যে, তোমরা শাযাব হটাইয়া দিতে পার কিনা তোমরা অক্ষম হইলে অবশ্য আমি উহাকে বিতাড়িত রিতে যত্নবান হইতাম। তোমারই যখন উহাকে বিতাড়িত করিতে সক্ষম তখন আমি পুলসিরাত ও মীযানের নিকট তাহার কাজে আসিব। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন আল্লাহ তা'আলা এমন দুইজন ফিরিশতা প্রেরণ করিবেন যাহাদের চক্ষুদ্বয় বিদ্যুতের ন্যায় এবং তাহার স্বর বজ্রের ন্যায়, তাহাদের দাঁত সিংহের ন্যায় তাহাদের শ্বাস-প্রশ্বাস আগুনের ফুলকির ন্যায়, তাহাদের চুল তাহাদের পায়ের নীচে ঝুলন্ত। তাহাদের উভয় কাঁধের মাঝে এত এত দুরত্ব। মায়া মমতা তাহাদের অন্তর হইতে বিদূরীত করা হইয়াছে, তাহাদের একজনকে বলা হয় মুনকার এবং অপর জনকে বলা হয় নকীর। তাহাদের প্রত্যেকের হাতে এত ওজনী হাতুড়ী হইবে যে রবীআহ ও মুযার গোত্রদ্বয়ের সকলে মিলিয়া উহা উঠাইতে চাহিলেও উহা উত্তোলন করা সম্ভব নহে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, তাহারা দাফনকৃত ব্যক্তিকে বসিতে বলিবে অতঃপর সে সোজা হইয়া বসিবে। তাহার কাফন তাহার কোমর পর্যন্ত পৌঁছাবে। অতঃপর তাহাকে জিজ্ঞাসা করিবে তোমার প্রতিপালক কে? তোমার দ্বীন কি? তোমার নবী কে? রাবী বলেন, তখন সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করিল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি ফিরিস্তাদ্বয়ের যে বর্ণনা দিলেন এমন অস্থায় কে আছে, যে কথা বলিতে সক্ষম হইবে? রাসূলুল্লাহ (সা) তখন এই আয়াত পাঠ করিলেন,
يثيتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَولِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَواةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخَرَةِ ويُضِلُّ اللهُ الظَّالِمِينَ وَيَفْعَلُ اللَّهُ مَا يَشَاءُ রাবী বলেন, তখন সে উত্তর করিবে আমার প্রতিপালক একমাত্র আল্লাহ যাহার কোন শরীক নাই। আমার দ্বীন ইসলাম এবং আমার নবী শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা)। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন, অতঃপর ফিরিস্তাদ্বয় বলে, তুমি সত্য বলিয়াছ। অতঃপর তাহারা তাহার কবরকে সম্মুখে চল্লিশ হাত তাহার ডান দিকে চল্লিশ হাত, তাহার বামদিকে চল্লিশ হাত তাহার পিছন দিকে চল্লিশ হাত তাহার মাথার দিকে চল্লিশ হাত প্রশস্ত করিয়া দিবেন। তিনি বলেন, মোট দুইশত হাত প্রশস্ত করা হইবে। বুরসানী বলেন, আমার ধারণা চল্লিশ হাত পর্যন্ত উহার বেষ্টনী হইবে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, অতঃপর ফিরিস্তাদ্বয়, তাহাকে বলেন, তুমি উপরের দিকে তাকাও, তখন দেখা যাইবে যে তাহার উপরে বেহেশতের দিকে একটি দরজা খোলা রহিয়াছে। তাহারা তখন আরো বলে, তুমি আল্লাহর বন্ধু। যেহেতু তুমি আল্লাহর হুকুমের অনুগত্য করিয়াছ, এই কারণে ইহাই তোমার বাসস্থান। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, সেই সত্তার কসম, যাহার হাতে আমার জীবন, 'তখন সে এতই আনন্দ লাভ করিবে যে চিরদিন তাহার অন্তরে উহা বিদ্যমান থাকিবে। অতঃপর তাহাকে বলা হইবে, তুমি নীচের দিকে তাকাও, তখন সে নীচের দিকে তাকাইয়া দেখিবে যে দোযখের দিকে একটি দরজা খোলা রহিয়াছে, তখন ফিরিশতাদ্বয় বলিবে, হে আল্লাহর বন্ধু। তুমি চিরদিনের জন্য ইহা হইতে মুক্তি লাভ করিয়াছ। রাবী বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা) বলিলেন, এই মুহূর্তেও তাহার অন্তরে এমন আনন্দ অনুভব করিবে যাহা চিরদিন তাহার অন্তরে বিদ্যমান থাকিবে। রাবী বলেন হযরত আয়েশা (রা) বলেন, বেহেশতের দিকে তাহার জন্য সাতাত্তরটি দরজা উন্মুক্ত করা হইবে। উহা দ্বারা বেহেশতের স্নিগ্ধ হাওয়া তাহার নিকট আসিতে থাকিবে।
তাফসীর ইবনে কাসীর