চন্দ্রের গতি: বিজ্ঞান ও কুরআনের আলোকে এক বিস্ময়কর বাস্তবতা

চাঁদের বিভিন্ন দশা

وَٱلْقَمَرَ قَدَّرْنَـٰهُ مَنَازِلَ حَتَّىٰ عَادَ كَٱلْعُرْجُونِ ٱلْقَدِيمِ

"আর চাঁদের জন্য আমরা নির্ধারণ করেছি বিভিন্ন মনজিল (অবস্থান), যতক্ষণ না তা পুরনো, শুকনো খেজুর শাখার মতো হয়ে যায়।"

— সূরা ইয়াসিন, আয়াত ৩৯

ই আয়াতে মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের জানাচ্ছেন যে, চাঁদ আকাশে বিশৃঙ্খলভাবে ঘুরে বেড়ায় না, বরং তার চলাচল একটি সুনির্দিষ্ট ও পরিমাপকৃত পথে বিভক্ত। এই পথকে কুরআনে বলা হয়েছে “মَنَازِلَ”—অর্থাৎ মনজিল বা পর্যায়ক্রমিক অবস্থান। চাঁদের এই সুশৃঙ্খল গতিপথ প্রাচীনকাল থেকে মানুষের জন্য সময় গণনা, ঋতু নির্ধারণ এবং দিক নির্ণয়ের এক নিখুঁত মহাজাগতিক ঘড়ি হিসেবে কাজ করে আসছে।

চাঁদের মনজিল কী?

আল্লাহ তাআলা চাঁদকে এক বিশেষ নিয়মে পরিচালিত করেন। চাঁদ প্রতি রাতে আকাশে একটি নির্দিষ্ট তারকাগুচ্ছ বা নক্ষত্রমণ্ডলের পাশে অবস্থান করে। এই অবস্থানগুলোকেই ‘মনজিল’ বলা হয়। ঐতিহাসিকভাবে জ্যোতির্বিদরা এই মনজিলগুলোকে ২৮টি ভাগে ভাগ করেছেন। অর্থাৎ, চাঁদ তার এক চান্দ্রমাসব্যাপী যাত্রাপথে প্রায় ২৮টি স্বতন্ত্র অবস্থান বা মনজিল অতিক্রম করে, যা শেষে পুরনো, বাঁকানো খেজুর ডালের মতো সরু হয়ে পুনরায় নতুন করে যাত্রা শুরু করে।

চন্দ্রের ২৮টি মনজিলের তালিকা

ক্রম আরবি নাম উচ্চারণ বাংলা অর্থ
الشرطينআশ-শারতাইনদুটি চিহ্ন
البطينআল-বুতাইনক্ষুদ্র উদর
الثرياআস-সুরাইয়াকৃত্তিকা নক্ষত্রপুঞ্জ
الدبرانআদ-দাবরানঅনুসরণকারী
الهقعةআল-হাক'আমাথার চুল
الهنعةআল-হান'আগলার দাগ
الذراعআয-জিরা'প্রসারিত বাহু
النثرةআন-নাসরাহসিংহরাজের নাসিকা
الطرفআত-তারফচোখের পলক
১০الجبهةআল-জাবহাকপাল
১১الزبرةআয-যুবরাহসিংহের কেশর
১২الصرفةআস-সারফাহপরিবর্তনকারী
১৩العواءআল-আউওয়াআহ্বানকারী
১৪السماكআস-সিমাকউন্নত অবস্থান
১৫الغفرআল-গাফরক্ষমা
১৬الزباناআয-যুবানাকাঁকড়ার দাঁড়া
১৭الإكليلআল-ইক্লীলমুকুট
১৮القلبআল-কলববৃশ্চিকের হৃদয়
১৯الشولةআশ-শাওলাহকাঁটা বা হুল
২০النعايمআন-না'আয়িমউটপাখি
২১البلدةআল-বালদাহখালি স্থান
২২سعد الذابحসা'দ আয-যাবিহকসাইয়ের সৌভাগ্য
২৩سعد بلعসা'দ বুলা'গিলে ফেলার সৌভাগ্য
২৪سعد السعودসা'দ আস-সু'উদসৌভাগ্যের সৌভাগ্য
২৫سعد الأخبيةসা'দ আল-আখবিয়াহতাবুর সৌভাগ্য
২৬المقدمআল-মুকাদ্দিমঅগ্রবর্তী অংশ
২৭المؤخرআল-মু'আখখিরপশ্চাদবর্তী অংশ
২৮الرشاআর-রিশা'দড়ি
কুরআন ও বিজ্ঞানের মেলবন্ধন থেকে শিক্ষণীয়
  • মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু, এমনকি চাঁদও একটি নিখুঁত ঐশ্বরিক নিয়ম ও শৃঙ্খলার অধীনে পরিচালিত।
  • ১৪০০ বছর পূর্বে কুরআনে বর্ণিত চাঁদের ‘মনজিল’ বা পর্যায়ক্রমিক অবস্থানের ধারণা আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের সাথে সম্পূর্ণরূপে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
  • আল্লাহর সৃষ্টিকে পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা করাও এক প্রকার ইবাদত, যা ঈমানকে আরও মজবুত করে।
  • চাঁদের এই সুশৃঙ্খল গতিপথ আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার গুরুত্ব শেখায়।
Author

লেখক: মোহাম্মদ আবু তালহা

গবেষক, কুরআন ও বিজ্ঞান