.png)
জ্ঞানের সন্ধানে যাত্রা
একবার মুসা (আঃ) বনি ইসরাইলের এক সমাবেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, "কোন ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী?" তিনি উত্তর দিলেন, "আমি"। তাঁর এই উত্তরে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হলেন, কারণ তিনি জ্ঞানের উৎস হিসেবে আল্লাহর কথা বলেননি।
তখন আল্লাহ্ মুসা (আঃ)–কে জানালেন, "দুই নদীর সংযোগস্থলে আমার এমন এক বান্দা আছে, যে তোমার চেয়েও বেশি জ্ঞানী।" মুসা (আ.) আগ্রহের সাথে বললেন, "হে আমার রব! আমি কীভাবে তাঁর কাছে পৌঁছাতে পারি?" আল্লাহ্ বললেন, "তুমি একটি মাছ ধরে থলিতে রাখো। যেখানে গিয়ে তুমি মাছটি হারিয়ে ফেলবে, সেখানেই তাঁকে পাবে।"
মুসা (আ.) তাঁর সঙ্গী ইউশা ইবনে নুনকে নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন। যেতে যেতে একটি পাথরের কাছে পৌঁছে তাঁরা বিশ্রাম নিলেন এবং মুসা (আ.) ঘুমিয়ে পড়লেন। এসময় মাছটি থলি থেকে বেরিয়ে নদীতে চলে গেল এবং আল্লাহর ইচ্ছায় তার চলার পথ একটি সুড়ঙ্গের মতো হয়ে গেল। কিন্তু ইউশা (আ.) এই আশ্চর্য ঘটনাটি মুসা (আ.)-কে বলতে ভুলে গেলেন।
পরদিন সকালে যখন মুসা (আ.) ক্লান্তি বোধ করলেন এবং নাশতা চাইলেন, তখন ইউশা (আ.)-এর ঘটনাটি মনে পড়ল। তিনি বললেন, "শয়তানই আমাকে মাছটির কথা আপনাকে বলতে ভুলিয়ে দিয়েছে।" মুসা (আ.) বললেন, "এই তো সেই জায়গা, যা আমরা খুঁজছিলাম!" তাঁরা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে সেই পাথরের কাছে ফিরে গেলেন।
তিনটি শর্ত ও তিনটি ঘটনা
পাথরের কাছে ফিরে এসে তাঁরা এক ব্যক্তিকে উপবিষ্ট দেখতে পেলেন। মুসা (আ.) তাঁকে সালাম দিলেন। তিনিই ছিলেন খিজির (আ.)। মুসা (আ.) তাঁর কাছে জ্ঞানার্জনের জন্য সঙ্গী হওয়ার অনুমতি চাইলেন।
খিজির (আ.) বললেন, "আমার সঙ্গে থাকলে আপনি ধৈর্য রাখতে পারবেন না। তাছাড়া যার রহস্য আপনার জানা নেই, সে ব্যাপারে আপনি ধৈর্য রাখবেনই বা কী করে?"
মুসা (আ.) প্রতিজ্ঞা করলেন, "ইনশা আল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীল হিসেবেই পাবেন। আমি আপনার কোনো আদেশ অমান্য করব না।"
এরপর তাঁরা একসাথে চলতে লাগলেন। প্রথমে তাঁরা একটি নৌকায় উঠলেন। নৌকার মালিকরা খিজির (আ.)-কে চিনে কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই তাঁদের তুলে নিলেন। কিন্তু হঠাৎ খিজির (আ.) কুঠার দিয়ে নৌকাটির একটি তক্তা উপড়ে ফেললেন। মুসা (আ.) অধৈর্য হয়ে বললেন, "আপনি এ কী করলেন? তাঁরা আমাদের বিনা পারিশ্রমিকে নিলেন, আর আপনি তাঁদের ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য নৌকা ফুটো করে দিলেন?" খিজির (আ.) কেবল মনে করিয়ে দিলেন, "আমি কি বলিনি, আপনি আমার সঙ্গে ধৈর্য রাখতে পারবেন না?"
এরপর তাঁরা একটি বালকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যে অন্য বালকদের সাথে খেলছিল। খিজির (আ.) ছেলেটিকে ধরে হত্যা করলেন। মুসা (আ.) এবারও惊িত হয়ে বললেন, "আপনি একটি নিষ্পাপ বালককে বিনা অপরাধে হত্যা করলেন? এ তো এক গুরুতর অন্যায়!" খিজির (আ.) তাঁকে তাঁর প্রতিশ্রুতির কথা পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিলেন।
শেষে তাঁরা এক জনপদে পৌঁছালেন এবং গ্রামবাসীদের কাছে খাবার চাইলেন, কিন্তু তারা আতিথেয়তা করতে অস্বীকার করল। সেখানে তাঁরা একটি পতনোন্মুখ দেয়াল দেখতে পেলেন। খিজির (আ.) সেটি নিজ হাতে সোজা করে দিলেন। মুসা (আ.) বললেন, "আপনি ইচ্ছা করলে তো এর বিনিময়ে পারিশ্রমিক নিতে পারতেন।"
ঘটনাগুলোর পেছনের রহস্য
খিজির (আ.) বললেন, " এখানেই আপনার আর আমার মধ্যে বিচ্ছেদ। তবে যে ঘটনাগুলোতে আপনি ধৈর্য ধরতে পারেননি, সেগুলোর রহস্য আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি।"
"নৌকাটির বিষয়টি হলো, এটি ছিল কিছু গরিব লোকের। তাদের সামনে ছিল এক অত্যাচারী বাদশাহ, যে প্রতিটি নিখুঁত নৌকা জোর করে কেড়ে নিত। আমি নৌকাটি ত্রুটিযুক্ত করে দিয়েছি, যাতে বাদশাহ তা কেড়ে না নেয়।"
"আর বালকটির মা-বাবা ছিলেন মুমিন। আমার আশঙ্কা ছিল, সে বড় হয়ে তার অবাধ্যতা ও কুফরি দ্বারা তাদের কষ্ট দেবে। তাই আল্লাহ চাইলেন, তিনি যেন তাদের এর পরিবর্তে আরও উত্তম, পবিত্র ও দয়ামায়াসম্পন্ন সন্তান দান করেন।"
"সবশেষে, ঐ দেয়ালটির নিচে ছিল শহরের দুই এতিম বালকের গুপ্তধন। তাদের বাবা ছিলেন একজন সৎকর্মশীল ব্যক্তি। আল্লাহ চাইলেন, তারা যেন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে নিজেদের সম্পদ উদ্ধার করতে পারে। আমি যা কিছু করেছি, নিজের ইচ্ছায় করিনি, বরং এসবই আপনার রবের পক্ষ থেকে রহমত।"
- মানুষের জ্ঞান অত্যন্ত সীমিত; সকল জ্ঞানের উৎস একমাত্র আল্লাহ।
- ظاهری ঘটনা দেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়, কারণ এর পেছনে গভীর ঐশ্বরিক প্রজ্ঞা থাকতে পারে।
- আল্লাহর হুকুম পালনে ধৈর্য ধারণ করা নবীদেরও একটি বড় পরীক্ষা ছিল।
- বাবা-মায়ের সততার পুরস্কার তাদের সন্তানরাও পেয়ে থাকে।