সুলায়মান (আঃ) ও সাবা রাণী বিলকিস

সুলায়মান (আঃ) এর সিংহাসন কক্ষ

প্রজ্ঞা, বুদ্ধিমত্তা ও ঈমানের উপাখ্যান

বী সুলায়মান (আঃ) ছিলেন দাউদ (আঃ)-এর পুত্র এবং তিনি ছিলেন একাধারে নবী ও বাদশাহ। আল্লাহ তাঁকে অসাধারণ জ্ঞান, সকল প্রাণীর ভাষাজ্ঞান এবং পশুপাখি, জিন ও বাতাসের উপর কর্তৃত্ব দান করেছিলেন। সূরা আন্-নামল-এ তাঁর ও সাবা’র রাণী বিলকিসের এক বিস্ময়কর কাহিনি বর্ণিত হয়েছে, যা বিশ্বাস, নেতৃত্ব এবং আল্লাহর একত্ববাদের এক চমৎকার শিক্ষা দেয়।

একদিন নবী সুলায়মান (আঃ) তাঁর বিশাল সেনাবাহিনী পরিদর্শন করছিলেন, যেখানে মানুষ, জিন ও পাখিরাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি পাখিদের সারি পরিদর্শন করতে গিয়ে বললেন:

وَتَفَقَّدَ ٱلطَّيْرَ فَقَالَ مَا لِىَ لَآ أَرَى ٱلْهُدْهُدَ أَمْ كَانَ مِنَ ٱلْغَآئِبِينَ

"আমি হুদহুদকে দেখছি না কেন? সে কি অনুপস্থিতদের অন্তর্ভুক্ত?" — সূরা আন্-নামল, আয়াত ২০

তাঁর এই প্রশ্নই এক মহাকাব্যিক ঘটনার সূচনা করে, কারণ হুদহুদ ফিরে এসেছিল এক অভাবনীয় রাজ্যের সংবাদ নিয়ে।

কিছুক্ষণ পরেই হুদহুদ ফিরে এসে জানায়, সে এক উন্নত ও সমৃদ্ধ রাজ্য দেখে এসেছে—সাবা। সেখানকার শাসক ছিলেন এক বিচক্ষণ ও শক্তিশালী রাণী, বিলকিস। হুদহুদ আরও জানাল:

إِنِّى وَجَدتُ ٱمْرَأَةً تَمْلِكُهُمْ وَأُوتِيَتْ مِن كُلِّ شَىْءٍ وَلَهَا عَرْشٌ عَظِيمٌ

"আমি এক নারীকে তাদের উপর রাজত্ব করতে দেখেছি। তাকে সবকিছুই দেওয়া হয়েছে এবং তার একটি বিশাল সিংহাসন আছে।" — সূরা আন্-নামল, আয়াত ২৩

কিন্তু তাদের একটি বড় ভুল ছিল—তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে সূর্যের পূজা করত।

খবর যাচাই করার জন্য সুলায়মান (আঃ) একটি চিঠি লিখলেন এবং হুদহুদকে তা রাণীর কাছে পৌঁছে দিতে বললেন। চিঠিতে লেখা ছিল:

إِنَّهُۥ مِن سُلَيْمَـٰنَ وَإِنَّهُۥ بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ. أَلَّا تَعْلُوا۟ عَلَىَّ وَأْتُونِى مُسْلِمِينَ

"এটি সুলায়মানের পক্ষ থেকে এবং এটি আল্লাহর নামে শুরু, যিনি পরম দয়ালু, অসীম করুণাময়। আমার বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করো না এবং আত্মসমর্পণ করে আমার কাছে এসো।" — সূরা আন্-নামল, আয়াত ৩০-৩১

রাণী বিলকিস যুদ্ধ না করে প্রথমে পরিস্থিতি বোঝার জন্য মূল্যবান উপহারসহ এক প্রতিনিধি দল পাঠান, কিন্তু সুলায়মান (আঃ) তা প্রত্যাখ্যান করে বুঝিয়ে দেন যে তিনি জাগতিক সম্পদে আগ্রহী নন।

রাণী বিলকিস যখন সুলায়মান (আঃ)-এর দরবারে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন, তখন নবী তাঁর প্রজ্ঞা ও আল্লাহর দেওয়া ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য এক অলৌকিক ঘটনা ঘটালেন। তিনি সভাসদদের জিজ্ঞেস করলেন, "কে রাণীর সিংহাসনটি এখানে নিয়ে আসতে পারবে?"

এক শক্তিশালী জিন চোখের পলকে তা নিয়ে আসার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু কিতাবের জ্ঞানপ্রাপ্ত এক ব্যক্তি বললেন, তিনি চোখের পলক ফেলার আগেই তা নিয়ে আসবেন—এবং তাই হলো!

রাণী এসে নিজের সিংহাসন দেখে বিস্মিত হলেন। এরপর তাকে একটি স্ফটিক-নির্মিত প্রাসাদে প্রবেশ করতে বলা হলো, যা দেখে তার পানির স্রোত বলে ভ্রম হলো। এই অলৌকিকতা ও প্রজ্ঞা দেখে তিনি ঘোষণা করলেন:

رَبِّ إِنِّى ظَلَمْتُ نَفْسِى وَأَسْلَمْتُ مَعَ سُلَيْمَـٰنَ لِلَّهِ رَبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ

"হে আমার রব, আমি তো নিজের প্রতি জুলুম করেছিলাম! আমি সুলায়মানের সাথে বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করলাম।" — সূরা আন্-নামল, আয়াত ৪৪
এই কাহিনির শিক্ষণীয় দিক
  • দাওয়াতের ক্ষেত্রে শক্তি প্রদর্শনের চেয়ে প্রজ্ঞা ও কৌশল অধিক কার্যকর।
  • একজন নেতার জন্য তার অধীনস্থদের খোঁজখবর রাখা এবং প্রত্যেকের যোগ্যতা সম্পর্কে জানা আবশ্যক।
  • আল্লাহর দেওয়া ক্ষমতার বিনয়ী প্রকাশ মানুষকে সত্যের দিকে আকৃষ্ট করে।
  • সত্য উন্মোচিত হওয়ার পর অহংকার ত্যাগ করে তা মেনে নেওয়াই প্রকৃত বুদ্ধিমত্তার পরিচয়।
Author

লেখক: মোহাম্মদ আবু তালহা

উৎস: সূরা আন্-নামল (আয়াত ২০-৪৪)